বিশুদ্ধ পানির উৎস হিসেবে অনেকেই এখন ওয়াটার ফিল্টার বা পানি পরিশোধন যন্ত্র ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রম অ্যাকোয়াপোরিন ফিল্টার আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রে ব্যবহার হওয়া এই পানি পরিশোধন যন্ত্রটি প্রাকৃতিক উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করে থাকে। বিজ্ঞানী পিটার অ্যাগ্রে ১৯৯২ সালে প্রথম অ্যাকোয়াপোরিন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। কোষের মধ্য দিয়ে কীভাবে পানি পরিশোধিত হয়, তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন তিনি। এ কাজের জন্য ২০০৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান এই বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) প্রথম এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এরপর ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে এর প্রসার ঘটে। এ নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সিএনএনের খবরে বলা হয়, অ্যাকোয়াপোরিন মূলত এমন একটি প্রক্রিয়া, যা জীবন্ত কোষের ঝিল্লির মতো তৈরি একটি আবরণের মধ্য দিয়ে কেবল বিশুদ্ধ পানিকে অতিক্রম করতে দেয়। যেমন প্রকৃতিতে এই প্রক্রিয়াতেই উদ্ভিদের শিকড় মাটি থেকে বিশুদ্ধ পানি শোষণ করে। মানব শরীরেও একই প্রক্রিয়াতে কিডনি শরীরের দূষিত পানি পরিশোধন করে। ফলে এই প্রক্রিয়ায় পানির মধ্যে থাকা দূষিত সব উপাদান পরিশোধনের সময় আটকে যায়। এই প্রযুক্তিকেই পরবর্তী সময় বৃহৎ পরিসরে সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে কাজ করেছেন ডেনমার্কের নাগরিক পিটার হোম জেনসেন। তিনি ২০০৫ সালে অ্যাকোয়াপোরিন এ/এস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে তৈরি করেন অ্যাকোয়াপোরিন ফিল্টার বা পানি পরিশোধন যন্ত্র। অ্যাকোয়াপোরিন কোম্পানিটি জানিয়েছে, বর্তমান বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি লোকের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুবিধা নেই। দিন দিন বিশুদ্ধ পানির উৎস আরও কমছে। উন্নত দেশগুলোতেও অনেক লোক সাধারণ ট্যাপের পানিতে ভরসা রাখেন না। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি পরিবার তাদের বাড়িতে সরবরাহ করা পানির মান নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। ইউরোপের প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ সরাসরি ট্যাপ থেকে পানি খান না। এমন বাস্তবতায় অ্যাকোয়াপোরিন পানি পরিশোধন যন্ত্রটি যেকোনো স্থানের মানুষের জন্য নিরাপদ পানির উৎস হতে পারে। বাংলাদেশে অ্যাকোয়াপোরিন ফিল্টারের আমদানি ও বাজারজাত করছে ইনোভেয়া নামের একটি কোম্পানি। ইনোভেয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমানুল হক বলেন, ‘আমরা চাই এই নোবেল পুরস্কার পাওয়া গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সবার কাছে পৌঁছে দিতে। প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধনের এ প্রযুক্তি মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আমানুল হক জানান, অ্যাকোয়াপোরিন সাধারণ পানি থেকে ভারী ধাতু, মাইক্রোপ্লাস্টিক, ভাইরাসসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও দূষিত পদার্থকে আলাদা করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৯৫ ভাগ সূক্ষ্ম বর্জ্য পদার্থ পানি থেকে আলাদা করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া পানির অপচয়ও অনেক কম হয়। অ্যাকোয়াপোরিনের তিনটি প্রধান প্রয়োগের ক্ষেত্র হচ্ছে—পানীয় জল বিশুদ্ধকরণ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট এবং খাদ্য ও পানীয় প্রক্রিয়াকরণ (ফুড অ্যান্ড ব্রেভারেজ)। বর্তমানে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, সিঙ্গাপুর ও স্লোভেনিয়ায় অ্যাকোয়াপোরিনের কার্যক্রম রয়েছে। অ্যাকোয়াপোরিন প্রযুক্তি সম্পর্কে ডেনমার্কের কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী (সিইও) পিটার হোম জেনসেন জানান, তাঁদের দুটি লক্ষ্য। এক. সবার জন্য প্রাকৃতিক পানির ব্যবস্থা করা। দুই. প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পানির টেকসই পুনঃব্যবহার।